মিসওয়াক
একটি আরবি শব্দ, যা দাঁত পরিষ্কার
পল্লব Salvadora persica গাছ থেকে তৈরি করা হয়, আরবিতে যাকে আরাক গাছও
বলা হয়।সাধারণত মিসওয়াক দাঁত পরিষ্কারের জন্য ব্যাবহার করা হয় এবং প্রাকৃতিক হওয়ার
কারনে দাতের জন্যও খুব উপকারি। মিসওয়াক করা হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসসালাম) এর সুন্নত।
কিন্তু বর্তমানে
আমরা নব্য চিন্তার অধিকারী হয়ে এই মিসওয়াক এর কোন গুরুত্ব দেই না এবং ব্যাবহার
একেবারে নাই বললেই হয়। বরং যারা ব্যাবহার করে তাদেরও সনাতন লোক বলে আখ্যায়িত করা
হয়। কিন্তু ব্যাবহার হিসেবে ব্রাশ এর চেয়ে মিসওয়াক অনেকাংশে বেশি ফলদায়ক।
মিসওয়াক |
ইসলামে মিসওয়াক
হিসেবে এরকম ডাল ব্যাবহার করতে বলা হয়েছে যা সাধারনত তেঁতো হয়ে থাকে, কারন তেঁতো
রস দাঁত ও মাড়ি এবং আমাদের দেহের জন্য স্বাস্থ্যদায়ক। তাই মিসওয়াক তৈরিতে তেঁতো
জাতীয় গাছের নরম আঁশযুক্ত ডাল ব্যাবহার করা হয়। পিলু, নিম, বাবুল, কানির, জয়তুন
ইত্যাদি তেঁতো লবণাক্ত জাতীয় গাছের ডাল মিসওয়াক হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। উল্লেখ্য
যে আমরা সাধারণত যে মিসওয়াক ব্যাবহার করে থাকি তা পিলু গাছের ডাল স্বরূপ।
হযরত আলী (রাঃ)
বলেছেন, মিসওয়াক করার ফলে মস্তিষ্ক সজীব ও সতেজ হয়। প্রকৃতপক্ষে মিসওয়াকের মধ্যে
রাসয়নিক উপাদান হিসেবে ফসফরাস মৌল থাকে যা আমদের মস্তিষ্কেরে জন্য খুবই উপকারি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে মাটিতে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম বেশি থাকে সেখানে পিলু গাছ বেশি
জন্মে। মজার বিষয় হচ্ছে কবরস্থানে মুর্দাদের হার গলে যাওয়ার কারনে সেখানকার মাটিতে
ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম বেশি থাকে, তাই সেখানে পিলু গাছ বেশি জন্মে। অপরপক্ষে লবণাক্ত
মাটিতেও পিলু গাছ বেশি জন্মে।
মিসওয়াক ও
চিকিৎসাবিজ্ঞানঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তার মৌখিক পরিচ্ছন্নতা বৈশিষ্ট্য
এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইহা সমর্থন করেছে যে, মিসওয়াক ব্যাবহারের
দ্বারা ব্যাকটেরিয়া ও প্লেক রোগ প্রতিরোধ হয়। এছাড়াও বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডেন্টাল স্বাস্থ্যবিধির জন্য একটি ভাল হাতিয়ার
হিসেবে মিসওয়াক ব্যবহার খুবই উপযোগী। এছাড়াও
১। মিসওয়াক মুখ পরিষ্কার করে,
২। মুখের লালাস্রাব বৃদ্ধি করে যার ফলে শুষ্ক মুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়,
৩। Healing dental tissue নিয়ন্ত্রণ করে,
৪। মুখের মধ্যে বিল্ড আপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে,
৫। মুখের ব্যাকটেরিয়া জনিত আঠা রোগ দূর করে,
৬। নিঃশ্বাসের সাথে বের হওয়া দুর্গন্ধ দূর করে।
ব্রাশ না মিসওয়াক???
সর্বদিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ব্রাশের চেয়ে মিসওয়াক বেশি উপকারি। কেননা ব্রাশ করার দরুন দাঁতের ময়লা পরিষ্কার হলেও ব্রাশের মধ্যে সেই ময়লা জমে থাকে যা পানি দিয়ে ধুয়ার কারনেও দূর হয় না। তাই এখন অনেক ব্রাশের সাথেই কয়েকটি অতিরিক্ত ব্রাশ থাকে। অপরপক্ষে মিসওয়াক এর নরম তেঁতো আঁশের জন্য সেখানে কোন জীবাণু অবস্থান নিতে পারে না। এবং প্রতিদিন মিসওয়াকের ব্যবহৃত উপরের আঁশটুকু কেটে ফেলার দরুন প্রতিদিনই তেঁতো অংশটুকু থেকে যায় এবং সেখান থেকে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদানও পাওয়া যায় যা দাঁত ও দেহের সুরক্ষার জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়াও মিসওয়াক করার দ্বারা
১। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসসালাম) এর সুন্নত মানা হয়,
২। মুসলমান হিসেবে সওয়াব
পাওয়া যায়,
৩। দাঁত পরিষ্কার হয়,
৪। বিভিন্ন রোগ থেকে
মুক্তির উপায় হয়।
অপরপক্ষে ব্রাশ করার ধারা
শুধু দাঁত পরিস্কার হয়, এছাড়া অন্য কোন উপকার পাওয়া যায় না।
মিসওয়াক করার নিয়মঃ
মিসওয়াক সাধারণত হাতের
কনিষ্ঠ আঙুল পরিমান মোটা হলে ভাল হয় এবং তেঁতো গাছের নরম আঁশযুক্ত ডাল হলে ভাল হয়।
হাদিস পর্যালোচনা ও গবেষণায় দেখা যায় যে নিয়মিত
১। ওযুর সময় মিসওয়াক করা,
২। খাবারের পরে মিসওয়াক
করা,
৩। ঘুমানোর পূর্বে ও পরে
মিসওয়াক করা,
৪। নামাযের পূর্বে
মিসওয়াক করা দাঁত ও দেহের জন্য খুবই উপযোগী।
এছাড়াও অন্যান্য সময়ও
মিসওয়াক করা যায়।
এখন একটু চিন্তা করে দেখি হুজুর(সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসসালাম) এর যে সুন্নত প্রায় ১৫০০ বছর আগে মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তা আজ বর্তমান
প্রযুক্তির দ্বারা ব্যাখ্যা হচ্ছে । তাই বলা যায় ইসলামের প্রতিটা আহকামই আমাদের
দুনিয়া ও আখেরাত এর জন্য উপকার স্বরূপ। তাই চলুন এখন থেকেই ইসলামের ক্ষুদ্র থেকে
ক্ষুদ্র আহকামই হউক না কেন তা গুরুত্ব সহকারে পালন করার চেষ্টা করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন